
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যেন পুলিশ বাহিনী থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবাটা পেতে পারে, সে জন্য আমরা পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে যেকোনো ধরনের অপরাধ দমন করা সহজ এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশ কাজ করবে, সেটাই তাঁর আশা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসব দাবির বিষয়ে তিনি সম্মতি দেয়ার পরও কেন পূরণ হয়নি, তা তাকে অতিসত্ত্বর জানাতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২০’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উদ্যাপিত হচ্ছে। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ব্যয় হিসেবে নিই না। আমরা মনে করি, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে এটা আমাদের একধরনের বিনিয়োগ। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক সাজে সজ্জিত এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে জনগণের সেবা যাতে নিশ্চিত করতে পারি, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ১১৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও পুলিশ পদক সেবা এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক সেবা বিতরণ করেন।
পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) সেবা’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা’ প্রদান করা হয়।
বিপিএম মরহুম মো. আকতার হোসেনের (মরণোত্তর) পক্ষে তাঁর সহধর্মিণী এবং দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত এএসআই নান্নু মিয়া হুইলচেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে পুলিশের বদনাম ছিল। কিন্তু এবার ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো পত্রিকা কিছু লিখতে পারেনি।
তিনি দাবির বিষয়ে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলো গত বছরই তোলা হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল এবং আমার অফিস থেকে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, ঝুলে আছে তা আমি জানি না। এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব বসে আছেন, আমি তাদের কাছে জানতে চাই। তারাই বলবেন, কেন এগুলো পেন্ডিং রয়ে গেছে।
‘অনেক বেতন বাড়ানো হয়েছে। সেজন্য ভাতার ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে ২০১৫ সালের বেতনের সাথে অঙ্কের পরিমাণে হবে, পার্সেন্ট হারে হবে না। কিন্তু একটা জিনিস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি যে, ১৯৮৫ সালের টাকার মান বা টাকার ভাতা, মানে ১৫ টাকা ৩০ টাকা। আসলে তো এখন ১৫ টাকায় এক কাপ চাও পাওয়া যায় না। এই বিষয়গুলি কেন আমি জানি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবো এইগুলি সমন্বয় ও যুগোপযোগী করতে। আমার অফিস থেকে আমি পাঠিয়েছিলাম। এর অনেকগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। নিচের লেভেল থেকে কিছু গেলে তা যদি আটকে দেয়া হয় তাহলে সংশ্লিষ্টরা সংক্ষুব্ধ হয়। এগুলো কৌশলে বের করে আনাই তো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাবি করলে তো কেউ কম করে না। অন্তত অর্ধেক যেন পায় সেজন্য ডাবল দাবি করে। পুলিশের পক্ষ থেকে যে দাবিটা করা হয়েছে তাতে হিসাবে বাজেট থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত লাগবে। আমরা এখন অর্থবছরের মাঝামাঝি আছি। আগামী অর্থবছরের আগে পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তবে যৌক্তিকভাবে যতোটা করা যায় আমরা করবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজিপি মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মইনুর রহমান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ। কাজেই যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোটা আমি কর্তব্য বলে মনে করি।